বাঙালির প্রিয় পানীয় চা। সুস্বাদু চা-এর স্বাদ-গন্ধের তুলনা নেই। সকাল, দুপুর, বিকেল কিংবা রাত—চায়ের আড্ডা চলতেই থাকে। শীতকালে শিশির ভেজা ভোরে এমন চা উপভোগ করার আমেজ আনন্দদায়ক। বিভিন্ন এলাকার চায়ের নিজস্ব স্বাদ ও গন্ধ থাকলেও, স্বাস্থ্যগত উপকার কিন্তু একেক ধরনের চা রয়েছে। চায়ে বাড়তি কিছু উপাদান যোগ করতে স্বাদে আনতে পারেন বৈচিত্র্য। যেগুলো যোগ করবে বাড়তি স্বাদ, বাড়িয়ে দেবে এর গুণাগুণ। জেনে নিন এমন কিছু ভিন্ন স্বাদের চা বানোনোর রেসিপি।

আদা চা: সাধারণ সর্দি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথায় আদা চায়ের উপকারিতা আমরা প্রায় সবাই জানি। গরম এক কাপ চা জাদুর মত মাথা ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। এর রেসিপিতে আপনাকে পানি গরম করার সময় আদা টুকরা করে দিয়ে কিছুক্ষন জ্বাল দিতে হবে। এরপর চা পাতা ও চিনি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এছাড়া চা বানিয়ে তাতেও আদার কিছুটা রস মিশিয়ে চা পান করা যায়।

লেবু চা: উপকরণ: চা-পাতা ১ চা-চামচ, চিনি ২ চা-চামচ, লেবুর রস ২ চা-চামচ, লবণ ১ চিমটি, পানি ২ কাপ, আদা কুচি ১ টেবিল চামচ, তেজপাতা ১টি। প্রণালি: চুলায় পানি ফুটে উঠলে লেবু ছাড়া বাকি সব উপকরণ দিতে হবে। লালচে হলে লেবু দিয়ে নামিয়ে নিন। লেবুর ছোট টুকরা ও সামান্য আদা কুচি কাপে দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।

গুড় চা: উপকরণ: চা–পাতা ৩ চা-চামচ, ঘন দুধ আধা কাপ ও নলেন গুড় ২ চা-চামচ। প্রণালি: ফুটানো পানির মধ্যে চা–পাতা দিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট ফুটান। দুধ গুলিয়ে নিন। কাপে ঢেলে দুধ, গুড় মিশিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

মাল্টা চা : উপকরণ: পানি ২ কাপ, এলাচি ১টি, চা–পাতা ১ চা-চামচ, মাল্টার রস ২ চা-চামচ, মাল্টা দুই টুকরা ও চিনি ২ চা-চামচ। প্রণালি: একটি পাত্রে পানি, চিনি আর এলাচি দিয়ে ফুটতে দিন। টগবগ করে ফুটে উঠলে চা–পাতা দিয়ে দিতে হবে। ১ মিনিট জ্বাল দিন। এবার মাল্টার রস দিয়ে দিন। চামচ দিয়ে নেড়ে সঙ্গে সঙ্গেই নামিয়ে ফেলতে হবে। চায়ের কাপে ছেঁকে নিয়ে এক টুকরা (স্লাইস) মাল্টা দিয়ে পরিবেশন করুন।

মসলা চা: উপকরণ: সবুজ এলাচি ৫টি, দারুচিনি ১ টুকরা, চিনি স্বাদমতো, দুধ ১ কাপ, গোলমরিচ ১টি, লবঙ্গ ৪টি, চা–পাতা ২ চা-চামচ, আদাগুঁড়া ১ চা-চামচ ও আদা মিহি করে কাটা কয়েক টুকরা। প্রণালি: এলাচির খোসা ফেলে ভেতরের মসলা বের করে নিন। সব মসলা একসঙ্গে মিহি করে গুঁড়া করুন। প্যানে ৪ কাপ পানি গরম করে চা–পাতা দিন। চাইলে আধা চা-চামচ গ্রিন টিও দিতে পারেন কালো চায়ের সঙ্গে। গুঁড়া করে রাখা মসলা ও চিনি দিন। দুধ ও আদাগুঁড়া দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। নামানোর আগে আদাকুচি দিয়ে মৃদু জ্বালে রেখে দিন কয়েক মিনিট। পরিবেশন করুন গরম-গরম।

মালাই চা: উপকরণ: দুধ ৩ কাপ, চা–পাতা ৪ টেবিল চামচ কিংবা ৪টি টি-ব্যাগ, চিনি পরিমাণমতো, ডিমের কুসুম ১টির অর্ধেক ও দুধের সর বা মালাই পছন্দমতো। প্রণালি: দুধের মধ্যে ডিমের কুসুম ভালো করে মিশিয়ে দিন। তারপর চুলায় বসিয়ে জ্বাল দিন। দুধ ফুটে উঠলে চা-পাতা দিয়ে জ্বাল হতে দিন। পছন্দমতো রং ধরা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। চা যত কড়া খেতে চান, তত বেশি সময় জ্বাল দেবেন। এরপর চায়ের কাপে চিনি ও দুধের মালাই বা সর দিয়ে ভালো করে ফেটে নিন। এবার সরু ধারায় চা ঢালুন, ছাঁকনিটা একটু ওপরে ধরে রাখতে হবে। সরু ধারায় চা গিয়ে যখন কাপের মালাইয়ের ওপর পড়বে তখন আস্তে আস্তে কাপ ভরে উঠবে শুভ্র ফেনায়।

সাত রঙের চা: সিলেট শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত সাত রঙের চা সবার কাছেই খুব আকর্ষণীয়। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ শ্রীমঙ্গল ছুটে যান চা-টি খেতে। তবে বাড়ি বসেই যদি সাত রঙের চা তৈরি করা সম্ভব উপকরণঃ ১.চা পাতা ২.চিনি ৩.কনডেন্স মিল্ক প্রণালী: ১.প্রথমে ১ টেবিল চামচ চিনির সাথে ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে সিরা করে নিতে হবে। পরিমাণ মতো পানি এবং চা পাতা চুলায় জ্বাল দিয়ে লিকার তৈরী করে নিন। ১ টেবিল চামচ লিকার ও ১ চামচ সিরা মিশিয়ে রাখুন। তারপর ২ টেবিল চামচ কনডেন্স মিল্কের সাথে ১ টেবিল চামচ লিকার মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর একটা কাপে প্রথমে প্লেইন সিরা ঢেলে নিয়ে ২০ সেকেন্ড পরে সিরা মেলানো লিকার টা দিতে হবে। এর ৩০ সেকেন্ড পরে কনডেন্স মিল্কের মিশ্রন দিতে হবে। তার ১ মিনিট পর বাকি লিকারটুকু গরম করে একদম কাপের ধার ঘেষে আস্তে আস্তে ঢালতে হবে। দেখুন সহজেই তৈরী হয়ে গেলো সাত রঙের সেই চা

পুদিনা চা: উপকরণ: পানি ৩ কাপ, চা-পাতা ১ চা-চামচ, পুদিনাকুচি ২ টেবিল চামচ, লবঙ্গ ২-৩টি, মধু ২ টেবিল চামচ, লেমন জেস্ট ১ চা-চামচ (লেবুর খোসার কুচি)। প্রণালি: লবঙ্গ, পুদিনা, লেমন জেস্ট দিয়ে পানি ফোটান। ফুটে উঠলে চা-পাতা দিন। চায়ের লিকার ছেকে মধু মিশিয়ে পুদিনাকুচি দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

মরিচের চা: উপকরণ: ১.পানি ২. চা পাতা ৩. চিনি ৪. কাঁচা মরিচ প্রণালি: একটি পাত্রে চা তৈরীর পানি বসিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। অবশ্যই ভালো করে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। পরিমাণমতো চা পাতা দিয়ে দিন। লিকার চা-এর জন্য সবসময় চা পাতা পরিমাণ কম দিবেন। একটি কাপে এক চামচ চিনি নিন। এবার ছাকনি দিয়ে ছেকে কাপে চা ঢেলে দিন। একটি কাঁচা মরিচ মাঝখান থেকে লম্বা করে কেটে চা এর ওপর দিয়ে নাড়িয়ে নিন। তৈরী হয়ে গেল কাঁচা মরিচের চা।

তাছাড়া ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে এই চা খেতে হবে দুধ ছাড়া। হারবাল টি ভেষজ উপাদানে মিশ্রিত। এটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।